রালফ নেলসন এলিয়ট একজন প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টান্ট ছিলেন। তিনি ৭৫ বছরের মত স্টক মার্কেটের ডাটা জোগাড় করে তা বিশ্লেষণ করে দেখেন যে মার্কেট মুভমেন্ট বিশৃঙ্খল দেখা গেলেও আসলে সেরকম না।৬৬ বছর বয়সে তিনি, পর্যাপ্ত প্রমান যোগাড় করে তার খোজ সবার সাথে শেয়ার করলেন। তিনি “দ্যা ওয়েভ প্রিন্সিপাল” নামে তার বই প্রকাশিত করলেন।
তার মতে মার্কেট ক্রমাগত চক্রে মুভ করে, যেটাকে তিনি ইনভেস্টরদের ইমোশন হিসেবে চিনহিত করেছেন যা বাহ্যিক প্রভাব অথবা একসাথে অনেকের সংঘবদ্ধ সাইকোলজি দ্বারা সংঘটিত হয়।
এলিয়ট সাহেব বলেছেন যে প্রাইসে উপরের অথবা নিচের দিকের সুইং যা সংঘবদ্ধ সাইকোলজির জন্য হয়, সেগুলো সবসময় প্যাটার্ন হিসেবে দেখা যায়।
তিনি এইসব আপওয়ারড অথবা ডাউনয়ারড সুইংগুলকে “ওয়েভ” হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি বিশ্বাস করেন যে, যদি এই প্যাটার্নগুলোকে সঠিকভাবে চিনহিত করা যায়, তাহলে আপনি বলে দিতে পারবেন যে প্রাইস পরবর্তীতে কোথায় যাবে অথবা যাবে না। তথায় আপনি জ্যোতিষ বাবা হয়ে যাবেন।
এটা ট্রেডারদের কাছে এলিয়ট ওয়েভকে আকর্ষণীয় করে তলে। এটা আপনাদের একটা যথাযথ একটা পয়েন্ট মার্কেট রিভার্সাল চিনহিত করার উপায় দেয়। এক কথায়, এলিয়ট ওয়েভ মার্কেটে টপ ও বটম ধরার সুযোগ করে দেয়।এই বিশৃঙ্খল মার্কেট মুভমেন্টের মধ্যে তিনি শৃঙ্খলা খুজে বের করেছেন।
চলো যাই ! এখন শেখার দিকে মনোযোগ দেই। প্রথমে আপনার ফ্রাক্টাল সম্পর্কে জানা দরকার।
ফ্রাক্টাল
ফ্রাক্টাল সাধারনত সেইসব জিনিস যা কয়েক ভাগ করা যায়, যেটা সম্পূর্ণ কোন কিছুর মতই কিন্তু একটা অংশমাত্র। যেমন কেক, তার একটা অংশ হল ফ্রাক্টাল।এটা জানা দরকার কি? এলিয়ট ওয়েভের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিসয় হল যে এগুলো ফ্রাক্টাল। এলিয়ট ওয়েভকে আবার ছোট ওয়েভে ভাগ করা যায়।
এলিয়ট ওয়েভ আর ফিবোনাচ্চি
এলিয়ট ওয়েভ চিনহিত করতে ফিবোনাচ্চি অনেক কাজে দেয়। ফিবোনাচ্চি নিজে একটা সপরিপুরক ট্যুল আর এই ট্যুল ব্যাবহার করে ওয়েভ প্রজেকশন সহজ হয়ে যায়। ফিবোনাচ্চি রেশিও (৩৮.২%, ৫০%, ৬১.৮%, ১৬১.৮% ইত্যাদি) ব্যাবহার করে ট্রেডাররা ওয়েভের দৈর্ঘ্য, কারেকশনের গভীরতা, ইত্যাদির ধারনা নিতে পারেন। চলুন দেখিঃ
উপরের চার্টে দেখতে পারছেন যে প্রতিটা ওয়েভের জন্য নির্ধারিত কিছু ফিবো লেভেল আছে যা আপনাকে পরবর্তী ওয়েভ প্রজেকশনের জন্য একটা ধারনা দিতে পারে। এটা ব্যাবহারে কি ধরনের সুফল পাওয়া পারে?
এলিয়ট সাহেব দেখিয়েছেন যে ট্রেন্ডিং মার্কেট ৫-৩ ওয়েভ প্যাটার্নে মুভ করে।
ইম্পালস ওয়েভ – প্রথম ৫ টা ওয়েভ প্যাটার্ন
কারেক্টিভ ওয়েভ – শেষের ৩ টা ওয়েভ প্যাটার্ন
উপরের প্যাটার্নে ওয়েভ ১, ৩, ৫ হল মোটিভ, মানে এগুলো অভারঅল ট্রেন্ডের দিকে যায় আর ওয়েভ ২ এবং ৪ হল কারেক্টিভ ওয়েভ। এখন এগুলোকে বিশ্লেষণ করি।
ওয়েভ ১ – প্রথম বায়ার (Buyer) গ্রুপের এক আবেগপ্রবন আশাবাদ বর্ণনা করে। তারা বাই করার জন্য একটি ভালো কোন কারন পেয়েছে (হোক সেটা টেকনিক্যাল অথবা ফান্ডামেন্টাল) আর তাই তারা মার্কেট উপরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
ওয়েভ ২ – যেই না বায়াররা (Buyer)তাদের ট্রেড লাভে ক্লোজ করছে ওই ইম্পালস আস্তে আস্তে নেমে যাচ্ছে। অন্যান্য ইনভেস্টর যারা প্রথম ওয়েভ মিস করেছে, আর নতুন সুযোগের অপেক্ষায় আছে।
ওয়েভ ৩ – সাধারনত সবচেয়ে শক্তিশালী এবং দীর্ঘতম ওয়েভ। সকল ইনভেস্টর যারা বাই(Buy) করতে চায় ( যারা ওয়েভ ১ ধরতে পারেনি আর যারা ধরেছে) তারা এই ওয়েভে বাই(Buy) করবে। এছাড়াও, এই ওয়েভের মাঝপথে যারা আপট্রেন্ড মানতে দিধাবোধ করছিল তারাও এখন আপট্রেন্ডে সম্মতি দিবে। সবকিছু মিলিয়ে এটা মেইন ট্রেন্ডের দিকে জোরে একটা ঠ্যালা দিবে।
ওয়েভ ৪ – এখানে লাভ বুঝে নেয়ার সময়। ইম্পালসিভ মুভ আবার ম্লান হওয়া শুরু করে। কিন্তু কারেকশন অগভীর হবে যেহেতু এখনো অনেক বায়ার (Buyer)আছে যারা ট্রেন্ডে ঝাপ দিতে চায়।
ওয়েভ ৫ – আপট্রেন্ড আবার ক্রমাগত হয়, কিন্তু মার্কেট এখানে ওভারবট আর এটা নিশ্চিত যে একটা রিভার্সাল প্রয়োজন। ৫ম ওয়েভের শেষকে মাঝেমাঝে (আপট্রেন্ডে) ওভারসোল্ড এবং ডাইভারজেন্স হিসেবে মার্ক করা হয়।
প্রসারিত ইম্পালস ওয়েভ
একটা জিনিস আপনার জানা দরকার যে, এলিয়ট ওয়েভ থিওরিতে যেকোনো ইম্পালসিভ ওয়েভে (১, ৩ অথবা ৫) একটা ওয়েভ সম্প্রসারিত থাকেবে। সোজা কথায়, একটা ওয়েভ বাকি ২ টা ওয়েভের চেয়ে বড় থাকবে।
এলিয়ট সাহেবের মতে, সাধারনত এটা ৫ম ওয়েভ সম্প্রসারিত হয়। সময়ের সাথে সাথে মানুষ ৩য় ওয়েভকে সম্প্রসারিত ওয়েব হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ABC কারেকশন
৫ ওয়েভ ট্রেন্ড কারেকশন ৩ ওয়েভ কাউন্টারট্রেন্ড দিয়ে রিভার্স করে। কারেকশনের জন্য নাম্বারের বদলে লেটার ব্যাবহার করা হয়। নিচের ছবিটি দেখুন।
এলিয়ট সাহেবের মতে, ২১ ধরনের ABC কারেকটিভ প্যাটার্ন আছে। এই প্যাটার্নগুলো ৩ টা সহজ ফরমেশন দিয়ে তৈরি। সেগুলো হলঃ
- জিগজ্যাগ
- ফ্ল্যাট
- ট্রায়াঙ্গেল
জিগজ্যাগ
জিগজ্যাগ ফরমেশন খুব খাড়া মুভ যেটা ট্রেন্ডের বিপরিতে তৈরি হয়। ওয়েভ B সাধারনত A ও C এর তুলনায় সবচেয়ে ছোট মাপের হয়ে থাকে।
ফ্ল্যাট
ফ্ল্যাট ফরমেশন চওড়া ওয়েভে মুভ। ওয়েভের মাপ সাধারনত দৈর্ঘে সমান মাপের হয়। এতে B ওয়েভ সাধারনত A এর মুভ বাতিল করে এবং C ওয়েভ B এর মুভ বাতিল করে।
এখানে সাধারনত ব্যাবহার করা হয়েছে কারন মাঝেমধ্যে B ওয়েভ A ওয়েভের শুরুকে অতিক্রম করে।
ট্রায়াঙ্গেল
ট্রায়াঙ্গেল ফরমেশন হল সেই কারেকশন প্যাটার্ন যেগুলো কনভারজিং অথবা ডাইভারজিং ট্রেন্ডলাইন দিয়ে সংঘটিত হয়। ট্রায়াঙ্গেল ৫ ওয়েভ দ্বারা গঠিত হয়। এগুলো ট্রেন্ডের বিপরীতে সাইডওয়েতে মুভ করে। এই ট্রায়াঙ্গেলগুল সিমেট্রিক্যাল, উদ্ধগামি অথবা নিম্নগামি হতে পারে। নিচের ছবিগুলো দেখুন
ওয়েভের মধ্যে ওয়েভ
আগে বলেছিলাম যে এলিয়ট ওয়েভ হল ফ্রাক্টাল। প্রতিটা ওয়েভ সাব-ওয়েভ দ্বারা গঠিত। নিচের ছবিটি দেখুনঃ
উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন ওয়েভ ১, ৩, আর ৫ ছোট ৫ ওয়েভ ইম্পালস প্যাটার্ন তৈরি করেছে আর ওয়েভ ২ আর ৪ ছোট ৩ ওয়েভ কারেকশন প্যাটার্ন তৈরি করেছে? সবসময় মনে রাখবেন যে প্রতিটা ওয়েভ ছোট ছোট ওয়েভ প্যাটার্ন দ্বারা গঠিত হয় আর এগুলো মার্কেটে বার বার ঘটে।
সহজে ওয়েভ চেনার জন্য এলিয়ট ওয়েভ থিওরিতে ওয়েভকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করতে বিশেষ কিছু লেবেল ব্যাবহার করা হয়। এগুলো ছোট থেকে বড়তে সাজানো হয়। প্রত্যেক ধরনের ওয়েভের নাম, লেবেল, ও টাইম পেরিওড নিচে দেয়া হলঃ
উপরের চার্ট অনুযায়ী গ্রান্ড সুপার সাইকেল গঠিত হয় সুপার সাইকেল দ্বারা, সুপার সাইকেল গঠিত হয় সাইকেল দ্বারা ইত্যাদি। নিম্নে ওয়েভের অঙ্কিত একটা চার্ট দেয়া হলঃ
চার্ট দেখে বুঝতে পারছেন যে রিয়েল চার্টে ওয়েভ পারফেক্ট হয় না। এছাড়াও মাঝেমধ্যে ওয়েভ লেবেল করা কষ্টকর হয়ে থাকে। কিন্তু চর্চা করলে এসব কম কষ্টদায়ক হবে।
এলিয়ট ওয়েভের ৩ টি মৌলিক নীতি
এতক্ষণে আপনি হয়ত অনুমান করে ফেলেছেন যে এলিয়ট ওয়েভ থিওরি ট্রেডিঙে যা করা লাগবে তা হল সঠিকভাবে ওয়েভ চিনহিত করা। সঠিকভাবে ওয়েভ চিনহিত করার নজর হলে আপনি চার্টে কোন ওয়েভে আছেন আর বাই না সেল করবেন তা বের করতে পারবেন।
ওয়েভগুলতে লেবেল লাগাতে ৩ টা মৌলিক নীতি আছে যা ভাঙা যাবে না। সেগুলো হলঃ
নীতি ১ ইম্পালসিভ ওয়েভের মধ্যে ওয়েভ ৩ সবচেয়ে ছোট হতে পারবে না।
নীতি ২ ওয়েভ ২ ওয়েভ ১ এর শুরুকে অতিক্রম করতে পারবে না।
নীতি ৩ ওয়েভ ৪ ওয়েভ ১ এর প্রাইস এরিয়াকে অতিক্রম করতে পারবে না।
তারপর আসছে গাইডলাইন যা আপনাকে ওয়েভে লেবেল লাগাতে সাহায্য করবে। অনলাইনে প্রচুর গাউডলাইন আছে। এখানে ৩ টা মুখ্য গাইডলাইন উল্লেখ করা হল। উপরক্ত নীতি যেমন সবসময় মানতে হবে, এগুলো সবসময় না মানলে চলবে।সেগুলো হলঃ
গাইডলাইন ১ যখন ওয়েভ ৩ সবচেয়ে বড় ইম্পালস ওয়েভ, ওয়েভ ৫ আনুমানিকভাবে ওয়েভ ১ এর সমান হবে।
গাইডলাইন ২ ওয়েভ ২ এবং ৪ পর্যায়ক্রমিক হবে। যদি ওয়েভ ২ একটা খাড়া কারেকশন হয়, ওয়েভ ৪ ফ্ল্যাট কারেকশন হবে। ওয়েভ ২ ফ্ল্যাট হলে, ওয়েভ ৪ খাড়া কারেকশন হবে।
গাইডলাইন ৩ ৫ম ইম্পালস ওয়েভের পরে, ABC কারেকশন সাধারনত ওয়েভ ৪ এর লো এর মধ্যে সিমাবদ্ধ থাকে।
ওয়েভ ট্রেডিং
এতক্ষণ আপনি যার আশায় ছিলেন, সেই মুহূর্ত এসে গেছে। এলিয়ট ওয়েভ সম্পর্কে অনেক কিছু পরেছি আর বুঝেছি। এখন ওয়েভগুলো দিয়ে কীভাবে লাভ করতে হয় সেটা দেখব।
আমাদের কাছে এলিয়ট ওয়েভের ৩ টা মৌলিক নীতি আছে যা ভাঙা যাবে না। সেগুলো হলঃ
নীতি ১ ইম্পালসিভ ওয়েভের মধ্যে ওয়েভ ৩ সবচেয়ে ছোট হতে পারবে না।
নীতি ২ ওয়েভ ২ ওয়েভ ১ এর শুরুকে অতিক্রম করতে পারবে না।
নীতি ৩ ওয়েভ ৪ ওয়েভ ১ এর প্রাইস এরিয়াকে অতিক্রম করতে পারবে না।
এর সাথে ফিবোনাচ্চি যোগ করে ট্রেড সেটআপ বের করতে পারি। চলুন দেখিঃ
উপরের চার্টে কি এলিয়ট ওয়েভের কোন মৌলিক নীতি ভঙ্গ করেছে? যেসব গাইডলাইন ছিল, তা কি ভঙ্গ করেছে? এখানে ফিবোনাস্যি আমাদের কি ধরনের সাহায্য করেছে?
08 সারাংশ - এলিয়ট ওয়েভ থিওরি
এলিয়ট ওয়েভ থিওরির সারাংশ
এলিয়ট ওয়েভ হল ফ্রাক্টাল। প্রতিটা ওয়েভ কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়, যার আবার প্রতিটাকে একই রুপে চিনহিত করা যায়।
ট্রেন্ডিং মার্কেটে প্রাইস ৫-৩ ওয়েভ প্যাটার্নে মুভ করে।
প্রথম ৫ ওয়েভ প্যাটার্নকে ইম্পালসিভ ওয়েভ বলা হয়।
তিনটি ইম্পালসিভ ওয়েভের (১,৩,৫) মধ্যে একটি ওয়েভ বরধিত থাকবে। ওয়েভ ৩ সাধারনত বর্ধিত হয়ে থাকে।পরের ৩ ওয়েভ প্যাটার্নকে কারেকটিভ ওয়েভ বলে। সংখ্যার বদলে লেটার ব্যাবহার করা হয়।
১, ৩, ৫ ওয়েভে ছোট ছোট ৫ ওয়েভ ইম্পালস প্যাটার্ন দেখা যেতে পারে এবং ২ আর ৪ ওয়েভে ছোট ছোট ৩ ওয়েভ কারেকটিভ প্যাটার্ন দেখা যেতে পারে।
২১ ধরনের কারেকটিভ প্যাটার্ন আছে কিন্তু সেগুলো ৩ ধরনের সহজবোধ্য ফরমেশন দিয়ে তৈরি।
৩ টি ফান্ডামেন্টাল কারেকটিভ প্যাটার্ন হল – জিগজ্যাগ, ফ্ল্যাট, আর ট্রায়াঙ্গেল।
ফিবোনাচ্চি ওয়েভ প্রজেকশনে সহায়ক ট্যুল।
তিনটি নীতি যা ভঙ্গ করা যাবে নাঃ
নীতি ১ ইম্পালসিভ ওয়েভের মধ্যে ওয়েভ ৩ সবচেয়ে ছোট হতে পারবে না।
নীতি ২ ওয়েভ ২ ওয়েভ ১ এর শুরুকে অতিক্রম করতে পারবে না।
নীতি ৩ ওয়েভ ৪ ওয়েভ ১ এর প্রাইস এরিয়াকে অতিক্রম করতে পারবে না।
যদি এলিয়ট ওয়েভ ট্রেডার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে, এখানে যা শিখেছেন তা পর্যাপ্ত না। এলিয়ট ওয়েভ ট্রেডার হওয়ার জন্য আপনাকে আরও গভীরভাবে এর সম্পর্কে জানতে হবে। মার্কেট পারফেক্টলি মুভ করে না আর তাই আপনার চোখকে সেই ভাবে প্রশিক্ষন দিতে হবে যাতে আপনি সঠিক ওয়েভ চিনহিত করতে পারেন আর তার থেকে লাভ বের করে নিতে পারেন।
বিভিন্ন ধরনের অ্যানালিসিস
ফরেক্স মার্কেটে ৩ ধরনের অ্যানালিসিস করা যায়। সেগুলো হল:
- টেকনিক্যাল অ্যানালিসিস
- ফান্ডামেন্টাল অ্যানালিসিস
- সেন্টিমেন্টাল অ্যানালিসিস
এই ৩ ধরনের অ্যানালিসিস নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়। যে কোন ধরনের অ্যানালিসিস সবচেয়ে ভাল। চলুন দেখি
টেকনিক্যাল অ্যানালিসিস
টেকনিক্যাল অ্যানালিসিস পূর্বের প্রাইস ডাটা ব্যাবহার করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মার্কেট মুভমেন্ট নির্ধারন করে। তাত্ত্বিকভাবে আপনার চার্ট পূর্বের প্রাইস মুভমেন্টের সব তথ্য দেয়। তাহলে আপনার যা দরকার তা হল প্রাইস একশন বুঝা এবং তা দিয়ে ট্রেড করা।
এই প্রবাদটা হয়ত শুনেছেন “History tends to repeat itself। এটাই টেকনিক্যাল অ্যানালিসিসের মুলনিতী। পূর্বে যা ঘটেছিল তা আবার ভবিষ্যতে ঘটতে পারে। যদি প্রাইস কোন পয়েন্টে গিয়ে থামে আর সেই পয়েন্টের আশে পাশে ঘোড়াঘোরি করে তাহলে ট্রেডাররা সেই পরিস্থিতি দিয়ে মার্কেট থেকে লাভ বের করে নিতে পারে।
একজন ট্রেডার যখন টেকনিক্যাল অ্যানালিসিস শুনে তখন প্রথম যে জিনিষ তার মাথায় আসে তা হল চার্ট। আর এই চার্ট দিয়েই ট্রেডাররা ভবিষ্যৎ মার্কেট মুভমেন্ট নির্ধারণ করে থাকে। উপরের চার্টটা দেখুন।
আপনি দেখতে পারবেন যে প্রাইস প্রথমে একটি নির্দিস্ট রেঞ্জের মধ্যে মুভ করছে। আর যখন সেই রেঞ্জ থেকে বের হয়েছে তখন প্রাইস অন্য দিকে ছুটছে। টেকনিক্যাল অ্যানালিসিসের জন্য অনেক টুল আছে যা আপনি চার্টে ব্যাবহার করতে পারবেন ও সেগুলো দিয়ে মার্কেটে পরবর্তীতে কি হবে তা নির্ধারন করতে পাবেন।
ফান্ডামেন্টাল অ্যানালিসিস
ফান্ডামেন্টাল অ্যানালিসিস বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ডাটা যেগুলো কারেন্সির সাপ্লাই ও ডিমান্ডে প্রভাব ফেলে তা পরিক্ষা করে। এটা শুনতে সহজ মনে হলেও সাপ্লাই ও ডিমান্ড পরীক্ষা ও বিশ্লেষন করা এত সহজ নয়।
আপনার ট্রেডে ২ টা কারেন্সি জড়িত থাকে, তাই ২টা দেশের অর্থনিতী আপনার ট্রেডের সাথে জড়িত থাকে। এই ধরনের অ্যানালিসিসের পিছনে যে চিন্তাভাবনা থাকে তা হল, যদি একটি দেশের অর্থনিতী ভাল অবস্থায় থাকে তাহলে সেই কারেন্সির ভ্যালু বাড়বে আর যদি একটি দেশের অর্থনিতী খারাপ অবস্থায় থাকে তাহলে সেই দেশের কারেন্সির ভ্যালু কমবে। এখন ধরেন,
ব্রিটিশ অর্থনিতী উন্নতির দিকে যাচ্ছে আর ইউএস অর্থনিতীতে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। তাহলে GBP/USD এর অবস্থা কি হবে? আপনি বুঝতে পারছেন যে GBP/USD এর ভ্যালু বাড়বে।
সেন্টিমেন্টাল অ্যানালিসিস
ফরেক্স মার্কেট আপনি, আমি এবং অরো অসংখ্য ছোট, বড় এরং অনেক বড় ট্রেডার নিয়ে গঠিত। প্রত্যেকেরই মার্কেট সম্পর্কে নিজস্ব মতামত আছে। আপনার মার্কেট সম্পর্কে যেই ধারনা হয় তার উপর নির্নয় করে ট্রেড করেন । কিন্তু আপনার মতামত যতই দৃঢ় হোক না কেন আপনি একা মার্কেট মুভ করতে পারবেন না। তাই আপনি যদি মনে করেন যে GBP/USD এর ভ্যালু বাড়বে, আর সবাই চিন্তা করে যে GBP/USD এর ভ্যালু কমবে তাহলে এখানে আপনার কিছুই করার নেই।
ট্রেডার হিসেবে আপনাকে সবকিছু বিবেচনা করতে হবে, আর নির্নয় করতে হবে যে মার্কেট কি চিন্তা করছে। আর নির্নয় করতে হবে যে মার্কেট বুলশিট থুক্কু বুলিশ (bullish) না বিয়ারিশ (bearish)। এখানে
বুলিশ একটি কারেন্সি পেয়ারের ভ্যালু যখন বাড়ে।
বিয়ারিশ একটি কারেন্সি পেয়ারের ভ্যালু যখন কমে।
কোন ধরনের অ্যানালিসিস সবচেয়ে ভাল হয়?
এই প্রশ্নের উওর দেয়ার আগে আপনি এই প্রশ্নের উওর দিন যে নিম্নের ছবিতে কোনটা আগে এসেছে?
ফরেক্স মার্কেটে প্রতিটা অ্যানালিসিসের জন্যই কঠোর সমর্থনকারী আছে। তারা বলবে যে একটা আরেকটার চেয়ে ভাল। আসল কথা হল যে ৩ টাই ভাল আর প্রত্যেকের জন্য প্রয়োজনীয়। আপনি যেভাবে ট্রেড করতে সবচেয়ে সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেটা আপনার জন্য সবচেয়ে ভাল। চলুন আবার একটু দেখি যে এতক্ষন কি দেখলাম:
টেকনিক্যাল অ্যানালিসিস পূর্বের প্রাইস ডাটা ব্যাবহার করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মার্কেট মুভমেন্ট নির্ধারন করে।
ফান্ডামেন্টাল অ্যানালিসিস দেখে যে একটি দেশ অন্য দেশের তুলনায় কেমন করছে।
সেন্টিমেন্টাল অ্যানালিসিস নির্নয় করে যে মার্কেট বুলিশ না বিয়ারিশ।
এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ফান্ডামেন্টাল অ্যানালিসিস মার্কেট সেন্টিমেন্টকে আকার দেয় আর টেকনিক্যাল অ্যানালিসিস সেই সেন্টিমেন্টকে দেখতে সাহায্য করে। আর সেন্টিমেন্ট আমাদেরকে বাই অথবা সেল নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
তাহলে বুঝতে পারছেন যে ৩ ধরনের অ্যানালিসিসই আমাদের কোন না কোন ক্ষেএে প্রয়োজন। কিন্তু সবগুলোতে আমাদের পারদর্শী হওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে লাভ করা, আর যেটা আপনাকে তা দিতে পারবে তাতে পারদর্শী হোন।
ঝুঁকি সতর্কতা: ট্রেডিং সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ। মার্জিনে পার্থক্যের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা বা চুক্তির লেনদেন উচ্চ স্তরের ঝুঁকি বহন করে এবং সব বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। একটি সম্ভাবনা রয়েছে যে আপনি আপনার সম্পূর্ণ বিনিয়োগের সমান বা তার বেশি ক্ষতি বজায় রাখতে পারেন। অতএব, আপনার অর্থ বিনিয়োগ বা ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয় যা আপনি হারাতে পারবেন না। আপনি নিশ্চিত করা উচিত যে আপনি সমস্ত ঝুঁকি বুঝতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন